কসর নামাজের নিয়ম ও নিয়ত: মুসাফিরদের জন্য বাধ্যতামূলক নামাজ সংক্ষেপে জানুন

23

কসরের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়?

কসর নামাজ তখন পড়তে হয় যখন কেউ মুসাফির (ভ্রমণকারী) অবস্থায় থাকে। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, যদি কেউ ৪৮ মাইল (প্রায় ৭৭ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে ভ্রমণে থাকে এবং সেখানে ১৫ দিনের কম অবস্থানের নিয়ত করে, তাহলে সে মুসাফির গণ্য হবে এবং কসর নামাজ পড়তে পারবে।

কসর নামাজের নিয়ম:

ফরজ নামাজের ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজ ২ রাকাত করে পড়তে হয়। তবে ৩ রাকাত বিশিষ্ট ও বিতর নামাজের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নেই।

নামাজসাধারণ রাকাতকসর অবস্থায় রাকাত
ফজর২ ফরজ২ ফরজ (কোনো পরিবর্তন নেই)
জোহর৪ ফরজ২ ফরজ
আসর৪ ফরজ২ ফরজ
মাগরিব৩ ফরজ৩ ফরজ (কোনো পরিবর্তন নেই)
ইশা৪ ফরজ২ ফরজ
বিতর৩ (কোনো পরিবর্তন নেই)

সুন্নত নামাজের ব্যাপারে:

কসর নামাজের ক্ষেত্রে সুন্নত নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে ইচ্ছা করলে পড়া যায়। বিশেষ করে ফজরের সুন্নত নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি পরিত্যাগ না করাই উত্তম।

আপনি যদি ভ্রমণকারী হন এবং কসর নামাজ পড়তে চান, তবে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে হবে।

কসরের নামাজের রাকাত সংখ্যা ও এর বাধ্যতামূলক হওয়ার বিষয়ে হাদিস ও ফিকহের বিভিন্ন কিতাবে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দেওয়া হলো—

কসরের নামাজের রাকাত সংখ্যা ও এর বাধ্যতামূলক হওয়ার বিষয়ে হাদিস ও ফিকহের বিভিন্ন কিতাবে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দেওয়া হলো—

১. কুরআন থেকে প্রমাণ

আল-কুরআন, সূরা আন-নিসা (৪:১০১):
“আর যখন তোমরা সফরে বের হও, তখন যদি আশঙ্কা কর যে, কাফেররা তোমাদের কষ্ট দেবে, তাহলে নামাজ সংক্ষিপ্ত করা তোমাদের জন্য কোনো দোষের নয়।”

যদিও এই আয়াতে শত্রুর আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, তবে নবীজি ﷺ শত্রু না থাকলেও সফরে সবসময় কসর নামাজ আদায় করতেন, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

২. হাদিস থেকে প্রমাণ

📖 সহিহ মুসলিম (হাদিস নং ৬৮৬)
ইবনে উমর (রাঃ) বলেন:
“আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ, আবু বকর, উমর ও উসমান (রাযি.)-এর সঙ্গে সফরে থেকেছি। তাঁরা সবাই ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজগুলো সফরের সময় ২ রাকাত পড়তেন।”

📖 সহিহ বুখারি (হাদিস নং ১০৮০)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন:
“আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবীর জবানির মাধ্যমে নামাজকে ফরজ করেছেন; সফরে ২ রাকাত, স্থানে ৪ রাকাত এবং ভয়ের সময় ১ রাকাত।”

৩. ফিকহের কিতাব থেকে

📖 হেদায়া (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৮)
“কোনো ব্যক্তি যদি ৭৭ কিলোমিটার বা তার বেশি সফরে থাকে এবং ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করে, তবে সে কসর করবে। ৪ রাকাত ফরজ হলে ২ রাকাত পড়বে।”

📖 ফাতাওয়া আলমগীরি (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩৮)
“সফরে ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ ২ রাকাত পড়তে হবে। এটি ওয়াজিব; ৪ রাকাত পড়লে তা বিদআত হবে।”

সংক্ষেপে:

  • ফজর: ২ রাকাত (পরিবর্তন নেই)
  • যোহর, আসর, ইশা: ৪ → ২ রাকাত
  • মাগরিব: ৩ রাকাত (পরিবর্তন নেই)
  • বিতর: ৩ রাকাত (পরিবর্তন নেই)

🔹 এই সমস্ত দলিল থেকে প্রমাণিত হয় যে, কসর নামাজ করা মুসাফিরদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং ৪ রাকাত ফরজ নামাজকে ২ রাকাত পড়তে হবে।

কসর নামাজের নিয়ত করার নিয়ম:
নিয়ত মূলত মনের ইচ্ছাকেই বোঝায়, তবে মুখে উচ্চারণ করা যেতে পারে। কসর নামাজের ক্ষেত্রে নিয়ত করার সময় মূলত স্বাভাবিক নামাজের মতোই নিয়ত করতে হবে, তবে “কসর” বা “মুসাফির হিসেবে” নামাজ পড়ছি—এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

কসর নামাজের নিয়ত (বাংলায়):

🔹 যোহর/আসর/ইশার কসর নামাজের জন্য (২ রাকাত)
“আমি দুই রাকাত যোহর/আসর/ইশার ফরজ নামাজ কসরসহ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহর জন্য মুখ করে কাবার দিকে, আল্লাহু আকবার।”

🔹 ফজরের নামাজের নিয়ত (২ রাকাত, পরিবর্তন নেই)
“আমি দুই রাকাত ফজরের ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহর জন্য মুখ করে কাবার দিকে, আল্লাহু আকবার।”

🔹 মাগরিবের নামাজের নিয়ত (৩ রাকাত, পরিবর্তন নেই)
“আমি তিন রাকাত মাগরিবের ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহর জন্য মুখ করে কাবার দিকে, আল্লাহু আকবার।”

সংক্ষেপে:

  • নিয়ত মনে করাই যথেষ্ট, তবে মুখে বললে সমস্যা নেই।
  • ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে ৪ রাকাত হলে ২ রাকাত পড়তে হবে।
  • মাগরিব ও ফজরের নামাজে কোনো পরিবর্তন নেই।

হ্যাঁ, কসর নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব), যদি কেউ মুসাফির হওয়ার শর্ত পূরণ করে। অর্থাৎ, যদি কেউ ৭৭ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্বে ভ্রমণ করে এবং সেখানে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করে, তাহলে তাকে অবশ্যই কসর নামাজ পড়তে হবে।

🔹 কসর করা বাধ্যতামূলক কেন?
রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবারা যখন মুসাফির হতেন, তখন তারা ৪ রাকাত ফরজ নামাজকে ২ রাকাত হিসেবে আদায় করতেন। এটি কেবল অনুমোদিত (রুকসত) নয়, বরং বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব)। তাই কেউ মুসাফির হলে ৪ রাকাত ফরজ নামাজ ২ রাকাতের বেশি পড়তে পারবে না।

🔹 যদি কেউ ৪ রাকাত পড়ে ফেলে?
মুসাফির অবস্থায় যদি কেউ ৪ রাকাত পড়ে ফেলে, তাহলে তার নামাজ বিদআত হবে, কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ মুসাফির অবস্থায় কখনো ৪ রাকাত পড়েননি, বরং সবসময় কসর করেছেন।

📌 সংক্ষেপে:
✔ মুসাফির হলে কসর নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক।
✔ ৪ রাকাত ফরজ নামাজ ২ রাকাত পড়তে হবে।
✔ ৩ রাকাত ও ২ রাকাত ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নেই।
✔ ইচ্ছাকৃতভাবে ৪ রাকাত পড়া বিদআত এবং এটি ঠিক নয়।

No comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *